,

SAMSUNG CAMERA PICTURES

হবিগঞ্জের বেদে সম্প্রদায়দের মানবেতর জীবন যাপন

জুয়েল চৌধুরী ॥ হবিগঞ্জের বেদে সম্প্রদায়রা মানবেতর জীবন যাপন করছে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে অবহেলিত ও নির্যাতিত একটি জনগোষ্ঠির নাম বেদে সম্প্রদায়। এককালে তাদের সাপ খেলা ও গান বাজনা করে প্রচুর অর্থ উপার্জনকারী এ সম্প্রদায় আজ কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের জিবন যাত্রার মান। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে এদের জীবন। কখনো এ ঘাটে আবার কখনো অন্য ঘাটে সাড়ি বাধাঁ নৌকা’য়ই কাটে তাদের সংসার। বড় বড় হাট বাজার বা বৃহৎ জনপথের পাশে কোন নদী-নালায় একসাথে দলবদ্ধ হয়ে অস্থায়ী তাবু তৈরি করে বসবাস করে তারা। তাদের নির্দিষ্ট চিরাচরিত প্রথার নিয়ম অনুযায়ী পুরুষরা কোন নেয় সংসার দেখা-শুনার দায়িত্ব। আর পরিবারের ভরণ-পোষনসহ সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর যোগান দাতা বেদে নারীরা। সাপ খেলা দেখা পেশা হলেও তার পাশা-পাশি ঝাঁড়, ফুঁ, বাথের ব্যাথা, সিঙ্গা লাগানো দাতেঁর পোকা দমনসহ আরও অনেক আথ্যাতিক পেশার সাথে জড়িত তারা। তবে কালের বিবর্তনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি ও জনমানুষের সচেতনার ফলে তাও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে মাঝে-মাঝে আদালতপাড়া, সদর হাসপাতাল গেইট, হাটবাজারসহ বিভিন্নস্থানে মজমা বসিয়ে সাপ খেলা দেখানোসহ বিভিন্ন তাবীজ বিক্রি করতেও দেখা যায় পুরুষ বেদেদের। আবার কখনো নারীরা তাদের চিহিৃত খদ্দেরদের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য ‘আসেন গো, পোঁক খুলি, জোঁক খুলি, বিষ ব্যাথা নামাই, সিঙ্গা লাগাই’সহ বিভিন্ন ভাষা প্রয়োগ করে থাকে। শহরের মাছুলিয়া এলাকার খোয়াই নদীর চরে বসবাসকারী ঝুমা ও শাহেনা বলেন, ‘জন্ম থেকেই আমরা যাজাবর, আমাদের নির্দিষ্ট কোন বাসস্থান না থাকায় কোন এনজিও, সরকারী বা অন্যকোন প্রতিষ্ঠানরা আমাদের আর্থিক কোন সাহায্য বা ঋণ দেয় না। ফলে আমাদের পুরুষরা অর্থাভাবে বিকল্প কোন পেশা বা ব্যবসা করতে পারে না। আর তাই চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী আমাদের-ই পরিবারের ভরণ পোষন করতে হয়। কিন্তু মানুষরা আজ অনেক সচেতন আমাদের চিকিৎসা বা তন্ত্রে-মন্ত্রে আর বিশ^াসী নয় তারা। আমাদের সংসার খুবই কষ্টে চলে, দিনে দুই একবার না খেয়েও থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের বসবাস করার জন্য জায়গা দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেশের নাগরিক আমাদের কোন স্থায়ী কোন বাসস্থান নেই। সরকারের কাছে আমাদের পূর্ণবাসনের দাবী জানাচ্ছি’। একটি বিশেষ সমিক্ষায় দেখা গেছে, অতি ভারী বর্ষণ বা ঝড় তুফানের সময় বেদেদের একটু নিরাপত্তার জন্য তীরে উঠে আসলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের তোফের মুখে তারা আরও বিব্রত অবস্থায় পড়ে। জীবন যাত্রায় মান অনুন্নত থাকার ফলে আমাদের সমাজের লোকজন তাদের ভিন্ন চোখে দেখে। তাদের আলাদা করে রাখতে চায় আমাদের সমাজ থেকে।


     এই বিভাগের আরো খবর